ব্রণ একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা, যা অনেকের জীবনে বিরক্তির কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত ত্বকের তৈলাক্ত অংশে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে মুখে, কাঁধে ও পিঠে। তবে সঠিক যত্ন ও নিয়মিত রুটিন মেনে চললে ব্রণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এখানে কিছু উপায় দেওয়া হলো যা ব্রণর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে:
১. ত্বক পরিষ্কার রাখা
ত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। ব্রণ সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকে বেশি হয়, তাই দিনে দুইবার মৃদু ফেসওয়াশ ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করা উচিত। সাবান দিয়ে বেশি ঘষাঘষি না করে, মৃদুভাবে ত্বক পরিষ্কার করা ভালো। অতিরিক্ত তেল ও ময়লা জমা হলে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়, যা ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।
২. পর্যাপ্ত জল পান করা
প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করা ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জল শরীরের টক্সিন বের করে দেয়, যা ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করা উচিত।
৩. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
খাবারের ধরন ব্রণর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। চর্বিযুক্ত, তেল-ঝাল মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। পরিবর্তে তাজা ফল, শাক-সবজি এবং সঠিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খাওয়া ভালো। ভিটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
৪. ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
অনেকেই মনে করেন, তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত নয়, কিন্তু এটি ভুল ধারণা। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। তবে নন-কমেডোজেনিক (যা লোমকূপ বন্ধ করে না) ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত, যা ব্রণর সমস্যা বাড়াবে না।
৫. সঠিক প্রসাধনী ব্যবহার
প্রসাধনী ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তৈলাক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করলে ব্রণ বাড়তে পারে। তাই প্রসাধনী কেনার সময় ত্বকের ধরন অনুযায়ী নির্বাচন করা উচিত এবং ‘অয়েল-ফ্রি’ ও ‘নন-কমেডোজেনিক’ প্রসাধনী বেছে নেওয়া ভালো।
৬. স্ট্রেস কমানো
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ত্বকের ব্রণর সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই স্ট্রেস কমাতে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা নিয়মিত হাঁটাচলা করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে ত্বকও ভালো থাকবে।
৭. পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুমের অভাব শরীর ও ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ত্বকে বলিরেখা ও ব্রণর সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
৮. ত্বকের অতিরিক্ত স্পর্শ এড়ানো
অনেকেই দিনের বিভিন্ন সময়ে মুখে হাত দেন, যা ত্বকে ময়লা জমার কারণ হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া ব্রণ খোঁটাখুঁটি করাও ঠিক নয়, কারণ এতে ত্বকে সংক্রমণ ছড়িয়ে ব্রণর সমস্যা বাড়তে পারে।
৯. ঘরোয়া প্রতিকার
ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন:
- অ্যালোভেরা জেল: ত্বকের ব্রণর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

প্রয়োগের পদ্ধতি:
- প্রথমে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন।
- একটি তাজা অ্যালোভেরা পাতার ভেতরের জেল বের করে নিন বা বাজারে পাওয়া জেল ব্যবহার করতে পারেন।
- ত্বকের ব্রণ আক্রান্ত স্থানে বা পুরো মুখে পাতলা স্তর করে লাগান।
- ১৫-২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে নিন।
- তারপর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- দিনে ২ বার প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- মুলতানি মাটি: ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।

প্রয়োগের পদ্ধতি:
- ২ চামচ মুলতানি মাটি একটি বাটিতে নিন।
- এর সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল বা গোলাপজল মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।
- মিশ্রণটি মুখে সমানভাবে লাগান, বিশেষ করে ত্বকের তৈলাক্ত অংশে।
- ১৫-২০ মিনিট বা মাটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- এটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন, যা ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং ব্রণ কমাতে সহায়তা করবে।
- লেবুর রস: প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে।

প্রয়োগের পদ্ধতি:
- একটি তাজা লেবু কেটে তার রস বের করে নিন।
- কটন বল বা হাতের সাহায্যে লেবুর রস ব্রণ আক্রান্ত স্থানে বা মুখের টোনার হিসেবে হালকাভাবে লাগান।
- ১০-১৫ মিনিট রেখে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- তবে যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তারা লেবুর রসের সাথে সামান্য জল মিশিয়ে প্রয়োগ করুন, যাতে ত্বকে জ্বালা বা লালচে ভাব না হয়।
- সপ্তাহে ১-২ বার প্রয়োগ করা নিরাপদ।
সতর্কতা:
- লেবুর রস প্রয়োগ করার পর সরাসরি সূর্যের আলোতে না যাওয়াই ভালো, কারণ এটি ত্বকে ফোটো-সেনসিটিভিটি তৈরি করতে পারে।
- মুলতানি মাটি ব্যবহারের পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত যাতে ত্বক শুষ্ক হয়ে না যায়।
১০. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
যদি উপরের পদ্ধতিগুলি কার্যকর না হয় এবং ব্রণর সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তবে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা ত্বকের ধরণ অনুযায়ী উপযুক্ত চিকিৎসা ও পণ্য পরামর্শ দিতে পারবেন।
ব্রণর সমস্যা দূর করতে ধৈর্য এবং সঠিক যত্নের প্রয়োজন। নিয়মিত ত্বকের পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।