রাজ চক্রবর্তীর ‘সন্তান’ কি অবহেলিত?
‘সন্তান’ ছবির প্রদর্শন নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। পরিচালকের দাবি, বাংলা ছবিগুলো ন্যায্য প্রাপ্য সুযোগ পাচ্ছে না। রাজের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি যেখানে কলকাতায় মাত্র ৬১টি প্রদর্শন সময় পেয়েছে, সেখানে দেবের ‘খাদান’ পেয়েছে ১৪০টি প্রদর্শন। অন্যদিকে, সর্বভারতীয় সুপারহিট ছবি ‘পুষ্পা ২’ অধিকাংশ সিঙ্গল স্ক্রিন দখল করে রেখেছে।
কোন প্রেক্ষাগৃহে ‘সন্তান’ নেই?
দক্ষিণ এবং মধ্য কলকাতার বেশিরভাগ সিঙ্গল স্ক্রিনে ‘সন্তান’-এর কোনও উপস্থিতি নেই। প্রিয়া, নবীনা, অশোকা, অজন্তা, এবং অশোকা প্রেক্ষাগৃহে ‘সন্তান’ দেখানো হচ্ছে না। পরিবর্তে ‘খাদান’, ‘পুষ্পা ২’, ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’ এবং ‘চালচিত্র’-এর মতো ছবিগুলি স্ক্রিন দখল করেছে।
প্রিয়া হলের মালিক অরিজিৎ দত্ত জানিয়েছেন, ‘‘একসঙ্গে এতগুলো ছবি মুক্তি পেলে এটাই সমস্যা। ‘পুষ্পা ২’-এর মতো ব্লকবাস্টার ছবিকে সরিয়ে তিনটি বাংলা ছবি চালানো হচ্ছে। এছাড়া, দেবের অনুরোধে ‘খাদান’-কে দু’টি শো দেওয়া হয়েছে।” তবে, তিনি এটাও বলেন যে, ‘সন্তান’ প্রথম সপ্তাহে ভালো পারফর্ম করলে হয়তো পরে স্ক্রিন পেত। কিন্তু পরের সপ্তাহে ‘বেবি জন’ আসায় আরও সমস্যা হবে।
নবীনা, অজন্তা, অশোকা প্রেক্ষাগৃহেও জায়গা নেই
নবীনা প্রেক্ষাগৃহের মালিক নবীন চৌখানি ‘সন্তান’-এর অনুরোধকে গ্রাহ্য করেননি। তিনি জানান, “পুষ্পা ২ এবং খাদান-এর চাহিদা বেশি, তাই অন্য বাংলা ছবিকে স্ক্রিন দেওয়া যাচ্ছে না।” একই চিত্র দেখা গেছে অজন্তা ও অশোকা প্রেক্ষাগৃহে, যেখানে ‘খাদান’, ‘পুষ্পা ২’ এবং ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’-এর জন্য স্ক্রিন নির্ধারিত হয়েছে।
পরিবেশকের মতামত
এক পরিবেশক (যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দাবি করেছেন, “’খাদান’-এর প্রচার যতটা জোরদার হয়েছে, ‘সন্তান’-এর প্রচার তার চেয়ে অনেক কম। দেব উত্তরবঙ্গে প্রচার চালিয়েছেন, যেখানে রাজ চক্রবর্তী কোথাও প্রচার করেননি। ছবির স্ক্রিন পেতে হলে প্রচারের দিকেও নজর দিতে হয়।”
প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতার অভিযোগ
এসভিএফ-এর প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা এই বৈষম্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, ‘‘এটা শুধু স্ক্রিনের বিষয় নয়, বরং বাংলা ছবির অবমাননা।’’ তিনি আশঙ্কা করছেন, বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত পরিশ্রমী মানুষদের ভবিষ্যৎ এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া
রাজ চক্রবর্তী সরাসরি ‘সন্তান’ নিয়ে কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি শুধু ‘সন্তান’ নয়, চারটি বাংলা ছবির কথা বলছি। ‘পুষ্পা ২’ চলুক, কিন্তু বাংলা ছবি কেন স্ক্রিন পাবে না? আগে থেকে কীভাবে কেউ বলতে পারে, কোন ছবি ভালো ব্যবসা করবে? দর্শক যদি সিনেমা দেখতে না পায়, তবে ছবিটি হিট হবে কিনা সেটা বোঝা যাবে কীভাবে?’’
রাজ আরও বলেন, ‘‘খাদান বা সন্তান ঠিক স্ক্রিন পেয়ে নেবে, কিন্তু ৫ নং স্বপ্নময় লেন এবং চালচিত্রের মতো ছবির প্রতি ন্যায়বিচার করা দরকার। এই পরিস্থিতিতে মানসী সিংহের প্রথম ছবিটাই কিন্তু হল মালিকদের আস্থা অর্জন করেছিল। প্রতিম ডি গুপ্ত-ও ঘন ঘন ছবি বানান না, অথচ তার ছবিতেও বড় মাপের অভিনেতারা কাজ করেছেন।’’
স্ক্রিন বিভাজনের বৈষম্য
- ‘খাদান’: ১৪০টি প্রদর্শন সময়
- ‘সন্তান’: ৬১টি প্রদর্শন সময়
- ‘পুষ্পা ২’: প্রায় ৫০% প্রদর্শন সময়
- ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’ এবং ‘চালচিত্র’: বাকি সময় ভাগ করে নিয়েছে
বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার?
প্রযোজক ও পরিচালকদের অভিযোগ, বাংলা ছবির স্ক্রিন পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। পুজোর সময় বাদ দিলে, বছরের বাকি সময় প্রেক্ষাগৃহগুলি বেশি ভরসা করে হিন্দি এবং দক্ষিণ ভারতীয় ছবির উপর। ফলে, বাংলা ছবির প্রতি প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের মনোভাব বদলানো এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন ইন্ডাস্ট্রির বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি।