প্রতিবাদের ঢেউয়ে কুমোরটুলি শূন্য হয়ে পড়েছে

প্রতিবাদের ঢেউয়ে কুমোরটুলি শূন্য হয়ে পড়েছে

কুমোরটুলির সরু গলিতে তরুণীরা নিজেদের ছবির জন্য মডেল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে প্রতিমাগুলো প্লাস্টিকে মোড়ানো। মৃৎশিল্পীদের কাজের জায়গায় এইসব আলোকচিত্রীদের উপস্থিতি এতটাই বেড়ে গেছে যে, প্রতিমা তৈরির ঘরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। সেখানে পুজো উদ্যোক্তাদের দল দোকান থেকে দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর উৎসাহী দর্শকদের ভিড়ে সরু অলিগলির পরিস্থিতি বেশ অসুবিধাজনক। কিন্তু এর মধ্যেই অক্লান্ত শ্রমে মৃন্ময়ী প্রতিমা তৈরি করে চলেছেন মৃৎশিল্পী এবং তাদের কারিগরেরা।

প্রতিবছর দুর্গাপুজোর আগে কুমোরটুলির এই চেনা দৃশ্য এবার ভিন্ন। দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে গণেশ এবং বিশ্বকর্মা পুজোর প্রস্তুতি চললেও, কুমোরটুলিতে ভিড়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আর জি কর-কাণ্ডের পর থেকেই শহরের পরিস্থিতি উত্তাল। শহরবাসী কুমোরটুলিতে আসতে আগ্রহী নন, ফলে সপ্তাহান্তেও কুমোরপাড়া জনশূন্য হয়ে পড়েছে। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতির সম্পাদক কার্তিক পাল জানিয়েছেন, “আর জি করের নির্মম ঘটনার বিচার আমাদের প্রত্যাশা। শহরে প্রতিবাদের স্রোতে কুমোরটুলিও পিছিয়ে নেই। তাই এখানে ক্যামেরা হাতে তরুণীদের ভিড় নেই। সবাই প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছে।”

শিল্পীরা জানাচ্ছেন, রথের সময়ের চেয়ে এবারে বায়না কম আসার কারণে তারা হতাশ। গৌতম দাস বলেছেন, “কুমোরটুলি গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রায় ফাঁকা। কাজ চলছে, কিন্তু উৎসাহের অভাব রয়েছে। গত বছর ১৫ অগস্ট বা জন্মাষ্টমীর সময়ে নতুন বায়না আসেনি।”

আর জি কর-কাণ্ডের পর অনেকেই পুজো বন্ধ করার জন্য সামাজিক মাধ্যমে ডাক দিয়েছেন। পুজো বন্ধের প্রসঙ্গ আলোচনা হলেও কুমোরটুলি আশাবাদী যে শেষ পর্যন্ত পুজো হবে। কার্তিক পাল জানিয়েছেন, “পুজো লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবিকার সাথে যুক্ত। পুজো বন্ধ হলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। আমরা করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেছি, চাই না সেটা ফের ফিরে আসুক।”

এছাড়া, আর জি কর-কাণ্ডের কারণে অনেক পুজো উদ্যোক্তা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন, বলছেন শিল্পী সমীর পাল। তিনি জানান, “সোদপুরের এক উদ্যোক্তা দুদিন আগে এসেছিলেন। প্রথমে তারা পুজো বন্ধের কথা ভাবছিলেন, কারণ মৃত চিকিৎসক সোদপুরের মেয়ে। তবে পরে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, নমো নমো করে পুজো হবে।”

বিচারের দাবির মধ্যে প্রতিমার বায়না করতে সমস্যা হলেও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে চাপ পড়েছে। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতির সম্পাদক রণজিৎ সরকার বলেন, “আগে অনেকেই কুমোরটুলিতে এসে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেতেন। পুজোর উপহার হিসেবে হাতে বানানো পণ্যের চাহিদা ছিল। কিন্তু এবারে সেই বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।”

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
আরও পড়ুন
error: Content is protected !!