নরক চতুর্দশী কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত একটি বিশেষ পূজা, যা চতুর্দশী, রূপ চতুর্দশী এবং কালী চতুর্দশী নামেও পরিচিত। এটি মূলত মৃত্যু ও যমরাজের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য পালন করা হয়। দীপাবলির একদিন আগে পালিত হওয়ায় এই দিনটিকে ছোটো দীপাবলি নামেও অভিহিত করা হয়। এই দিনে সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালানোর মাধ্যমে দেবতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। যমরাজের পুজোর মাধ্যমে জীবনের দীর্ঘায়ু ও স্বাস্থ্য কামনা করা হয়, সেইসঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়।
নরক চতুর্দশীর ঐতিহ্য ও পালন পদ্ধতি
প্রথা অনুযায়ী, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে ভোরের আলো ফুটবার আগেই নরক চতুর্দশী পালন করা হয়। এই দিন দেহে তিল তেলের প্রলেপ দিয়ে ভোরের আগে স্নান করে যমরাজের পুজো করার রীতি বহু প্রাচীন। যদি একই দিনে চতুর্দশীর সময় পূর্ণিমা এবং ভোরকালীন সময়ের মিল থাকে, তবে সেই দিনকেই নারক চতুর্দশী হিসেবে গণ্য করা হয়।
নরক চতুর্দশীর পূজার ধরন:
১. এই দিনে সূর্যোদয়ের আগে তিল তেল মেখে স্নান করা শুভ বলে মনে করা হয়। স্নানের সময় আপামার্গ পাতার তিনটি মালা মাথার উপর তিনবার ঘোরানো হয়। ২. নরক চতুর্দশীর আগে আহোয়ী অষ্টমীতে এক পাত্র জল ভর্তি করে রাখা হয়। নরক চতুর্দশীতে সেই জল স্নানের জলে মিশিয়ে স্নান করলে অভিশাপমুক্তির আশীর্বাদ পাওয়া যায়। ৩. স্নান শেষে দুই হাতে যমরাজকে প্রণাম করে দক্ষিণ দিকে মুখ করে প্রার্থনা করা হয়। এর মাধ্যমে জীবনের সকল পাপমুক্তির কামনা করা হয়। ৪. এই দিনে যমরাজের উদ্দেশ্যে মূল দরজার বাইরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে রাখা হয়। ৫. সন্ধ্যায় সর্বদেবতার পূজা শেষে দুইদিকে দুটি প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবী লক্ষ্মীর আগমনের জন্য মানসিক প্রার্থনা করা হয়। ৬. নরক চতুর্দশীকে রূপ চতুর্দশীও বলা হয়, যা শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ। ৭. এই দিনে নিশিথ কালে বাড়ির অপ্রয়োজনীয় জিনিস দূর করার রীতি রয়েছে। এর অর্থ দারিদ্র্য দূরীকরণ।
পবিত্র চতুর্দশীর মাহাত্ম্য এবং কিংবদন্তি
নরক চতুর্দশীর দিনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পেছনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক কাহিনী রয়েছে। এইদিন সন্ধ্যায় প্রদীপের আলো জীবনের অন্ধকার দূর করে আলোকিত করে তোলে। চতুর্দশীকে ছোটো দীপাবলি বলা হয়, এবং এর বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান।
১. নরকাসুর বধের কাহিনী
একসময় নরকাসুর নামে এক দৈত্য ছিল, যার অত্যাচারে সাধুসন্তরা অতিষ্ট হয়ে পড়েন। নরকাসুর ১৬ হাজার দেবপত্নীকে বন্দী করেন। অবশেষে, শ্রীকৃষ্ণের সাহায্য নিয়ে তিনি নরকাসুরকে বিনাশ করেন এবং বন্দীদের মুক্তি দেন। এই ঘটনার স্মরণে কার্তিক মাসে নরক চতুর্দশী ও দীপাবলি উদযাপিত হয়।
২. দৈত্যরাজ বলির কাহিনী
দৈত্যরাজ বালিকে শ্রীকৃষ্ণ বর দেন, যে কেউ চতুর্দশীতে প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করলে তার পূর্বপুরুষের মুক্তি ঘটবে। তাই আজও এই দিনে প্রদীপ জ্বালানোর মাধ্যমে যমরাজের প্রণাম করা হয় এবং নরক চতুর্দশীর রীতি পালিত হয়।