দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds

দেবুত্থান একাদশী ব্রত: বৈকুণ্ঠ দ্বার খোলার শুভ লগ্ন ও পূজা পদ্ধতি

দেবুত্থান একাদশী ব্রত: বৈকুণ্ঠ দ্বার খোলার শুভ লগ্ন ও পূজা পদ্ধতি

দেবুত্থান একাদশী পরনা সময়: ১৩ নভেম্বর, সকাল ৬:৪২:৩৫ থেকে ৮:৫১:৪২ পর্যন্ত
স্থিতিকাল: ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট

কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে দেবুত্থান একাদশী বা প্রাবোধিনী একাদশী পালিত হয়, যা দিওয়ালির পরপরেই আসে। আষাঢ় মাসের একাদশীতে ভগবান বিষ্ণু যোগনিদ্রায় যান এবং কার্তিকের একাদশীতে আবার জেগে ওঠেন। এই একাদশীকে দেবতাদের জাগরণের দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, চার মাস ধরে ক্ষীর সাগরে ঘুমন্ত থাকা পর, শ্রী বিষ্ণু এই দিনে পুনর্জীবন লাভ করেন। এই চার মাসকালীন সময়কে ‘চতুর্মাস’ বলা হয়, যেখানে কোনও শুভকাজ সম্পন্ন হয় না। দেবুত্থান একাদশী থেকে শুরু হয় সবধরনের ধর্মীয় ও শুভ কার্যকলাপ। এদিন তুলসী বিবাহও বিশেষভাবে অনুষ্ঠিত হয়।

দেবুত্থান একাদশী ব্রত পালন ও পূজা বিধি

এই একাদশীর দিনে শ্রী বিষ্ণুর পূজার্চনা করে তাঁকে জাগ্রত করা হয়। এই পূজা পালনের নিয়মাবলী হলো:

  • সকালে ব্রত গ্রহণ: একাদশীর সকালে ব্রতের সংকল্প নিয়ে শ্রী বিষ্ণুর নাম স্মরণ করুন।
  • পরিষ্কার ও পায়ে চিহ্ন অঙ্কন: ঘর পরিষ্কার করে স্নান সেরে উঠানে শ্রী বিষ্ণুর পায়ের চিহ্ন আঁকুন।
  • পূজার সাজসজ্জা: ওখলি বা কাঠের পাত্রে ভগবানের ছবি আঁকুন এবং তাতে ফল, মিষ্টি, বেতার ফল (জুজুব), শিংড়া, ঋতুর ফল ও আখ রেখে ঢেকে রাখুন।
  • প্রদীপ প্রজ্জ্বলন: এই দিনে বাড়ির বাইরে ও মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানো হয়।
  • রাতের পূজা: রাতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে শ্রী বিষ্ণুসহ অন্যান্য দেবদেবীর পূজা করুন।
  • ভগবানের জাগরণ: ঘন্টা ও শঙ্খধ্বনি বাজিয়ে এবং “উঠো দেব, বসো দেব, আঙ্গুরিয়া ছটকাও দেব, নবী সুতো, নবী কাপাস, দেব উঠো কার্তিক মাস” মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ভগবানকে জাগ্রত করুন।

তুলসী বিবাহের আয়োজন

দেবুত্থান একাদশীতে তুলসী বিবাহের বিশেষ আয়োজন করা হয়। শালগ্রাম শিলা (ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক) ও তুলসী গাছের বিবাহ সম্পন্ন হয় যা এক বিশেষ আধ্যাত্মিক আনন্দে উদযাপিত হয়। তুলসীকে ‘বিষ্ণুপ্রিয়া’ বলা হয়, আর এই বিবাহ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভক্তরা শ্রী বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ করে।

বৈদিক ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, যেসব দম্পতির কন্যাসন্তান নেই, তাদের জীবনে অন্তত একবার তুলসী বিবাহ করা উচিত, যার ফলে তারা কন্যাদানের পূণ্যের অধিকারী হন।

দেবুত্থান একাদশী: একটি ঐতিহাসিক কাহিনী

একবার দেবী লক্ষ্মী ভগবান নারায়ণকে বলেছিলেন, “হে প্রভু! আপনি দিনের পর দিন জাগ্রত থাকেন অথবা সহস্র বছর গভীর নিদ্রায় যান! এর ফলে সৃষ্টি ও চলমান জগতের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই যদি আপনি প্রতি বছর নিয়মিতভাবে ঘুমাতে যান, তাহলে আমারও বিশ্রামের সুযোগ হবে।”

ভগবান নারায়ণ হেসে বলেন, “দেবি, তুমি ঠিকই বলেছ। তোমার ও অন্যান্য দেবতাদের আমার জন্য ক্লেশ সহ্য করতে হয়। তাই আমি প্রতি বছর বর্ষাকালে চার মাস ঘুমাবো, আর এই সময়ে তোমরা বিশ্রাম করতে পারবে। আমার এই চতুর্মাস নিদ্রা আমার ভক্তদের জন্য অত্যন্ত শুভ হবে। যারা আমার নিদ্রা ও জাগরণ উৎসবে আমার সেবা করবেন, আমি তাদের বাড়িতে তোমাকে নিয়ে অবস্থান করবো।”

এই দিনটি পূজা ও উপবাসের মাধ্যমে পালনের মধ্য দিয়ে ভক্তরা শ্রী বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ করে, এবং তাঁদের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তি আসে।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
আরও পড়ুন
error: Content is protected !!