১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ঃ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এটিই তাদের পঞ্চম এবং শেষ প্রচেষ্টা। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে পাঁচ দফা দাবিতে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। বৈঠক চলে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। বৈঠক শেষে ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা বাসে করে ফিরে যান সল্টলেকের ধর্নামঞ্চে, যেখানে তাঁরা গত সাত দিন ধরে আন্দোলনে রয়েছেন। আলোচনার ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন করলে এক চিকিৎসক জানান, ‘‘আলোচনা মোটের উপর ইতিবাচক হয়েছে। কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সরানো হচ্ছে।’’
বৈঠকের কিছু পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চিত করেন, চিকিৎসকদের দাবি অনুযায়ী মঙ্গলবারই সিপি বিনীত গোয়েলকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস হালদারকেও পদ থেকে সরানো হবে বলে ঘোষণা করেন। তাঁদের অন্য পদে স্থানান্তর করা হবে।
এদিকে, ধর্নামঞ্চে ফিরে চিকিৎসকরা জানান, বৈঠকের ফলাফল মোটের উপর সন্তোষজনক হলেও তাঁদের কাজ ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনই নয়। তাঁরা স্পষ্ট করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আন্দোলনকারীরা বৈঠকের আগে থেকেই জানিয়েছিলেন, কালীঘাটে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। ধর্নামঞ্চে ফিরে সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই সিদ্ধান্তগুলির পর আন্দোলনকারীরা কাজে ফিরবেন। তাঁর মতে, ‘‘৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, এখন আর কী বাকি!’’ চিকিৎসকদের পাঁচটি দাবির মধ্যে প্রথমটি সিবিআই এবং আদালতের বিষয়, তবে বাকি চারটির মধ্যে তিনটিতেই রাজ্য সরকার সায় দিয়েছে।
এদিকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বন্যা, ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের দ্রুত কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ধর্নাস্থল থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দেবাশিস হালদার জানান, ‘‘সরকার আমাদের আন্দোলনের কাছে মাথা নত করেছে। ৩৮ দিনের পরিশ্রমে আমরা জয়ী হয়েছি, এই জয় সাধারণ মানুষের জয়, চিকিৎসকদের জয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেব।’’
চিকিৎসকরা আরও জানান, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে দুর্নীতি এবং ‘ভয় দেখানোর সংস্কৃতি’ গড়ে উঠেছে, তা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে হবে। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালানোর পথ খোলা থাকবে বলেও তাঁরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকে তাঁদের নজর থাকবে বলে জানান চিকিৎসকদের প্রতিনিধি। এছাড়াও, তাঁদের দাবিগুলি কত দ্রুত কার্যকর হবে, সেই বিষয়েও নজর রাখা হবে।