দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds
দিনবদলের রবিবার: বিচার চেয়ে তীব্র প্রতিবাদে ফুঁসল রাজ্য

দিনবদলের রবিবার: বিচার চেয়ে তীব্র প্রতিবাদে ফুঁসল রাজ্য

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪: (৯ অগস্ট ২০২৪ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪)— এই ৩০ দিনের সময়কাল যেন প্রতীক হয়ে উঠেছে আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার জন্য। আর এই ঘটনার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ ক্রমশ আছড়ে পড়ছে নতুন নতুন রূপে। শুক্রবারের সেই ভয়ানক ঘটনার পর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ এখন রাজ্যের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে গিয়েছে। চিকিৎসকদের আন্দোলন, রাস্তার আন্দোলন, আর এখন তা সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে।

আরজি কর থেকে সারা রাজ্যে
আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে চিকিৎসকের রক্তমাখা দেহ উদ্ধারের পর থেকেই প্রতিবাদের ঢেউ শহরের অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল ও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় আন্দোলন। সেই ধারা ৮ সেপ্টেম্বর রবিবার আরও তীব্র আকার নেয়, যখন রাজ্য জুড়ে বিচারের দাবিতে নেমে আসে মানুষ। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পর্যন্ত কলকাতা ও তার আশেপাশে মিছিল, অবস্থান, কালো বেলুন উড়ানো, এমনকি গান-বাজনা সহ নানা রূপে প্রতিবাদ চলেছে।

সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রতিফলন
এবারের প্রতিবাদ যেন আরও গভীর, আরও পরিকল্পিত। যেমন ১৪ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের রাতে নারীরা ‘রাত দখল’ কর্মসূচি নিয়ে পথে নেমেছিলেন, তেমনই রবিবার ছিল সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। প্রতিটি জেলা, গ্রাম, শহর যেন এক সুতোয় গাঁথা হয়ে আন্দোলনে শামিল হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি হওয়ার আগে এই আন্দোলন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

প্রতিবাদের স্বর: মানববন্ধন ও স্লোগান
সোদপুর থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন তৈরি করে মানুষের অভূতপূর্ব একতা প্রকাশ করেছে। হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে হাতে হাত রেখে এক সারিতে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতিবাদের বার্তা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, উত্তর কলকাতার রিকশা চালকেরাও নিজেদের মত করে মিছিল করে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন।

কুমোরটুলির শিল্পীদের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ
দুর্গাপুজোর ব্যস্ততা সত্ত্বেও কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরাও আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন। শিল্পী সনাতন দিন্দা দুর্গা প্রতিমার চোখে কালো অশ্রু এঁকে তাদের ব্যথা প্রকাশ করেন।

চিত্রকলা দিয়ে প্রতিবাদ
দক্ষিণ কলকাতায় চিত্রকরদের প্রতিবাদ ছিল আরও অভিনব। তাঁরা রাস্তায় নানা রঙের চিত্র আঁকেন, যেখানে ফুটে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা। যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে এই চিত্র কর্মসূচি শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে।

রাজনৈতিক ছায়া
যদিও এই আন্দোলনে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক পতাকা দেখা যায়নি, তবু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ করেছে। তবে জনতার মধ্যে রাজনীতি কম, বরং বিচার চাওয়ার তীব্র আবেগ বেশি ছিল।

বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ
আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ এখন আন্তর্জাতিক মহলেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাইওয়ান, আমেরিকা, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে ভারতীয় প্রবাসীরা এই ঘটনায় বিচার দাবি করে আন্দোলন করেছেন। এই প্রতিবাদ এখন আর শুধুমাত্র বাংলার গণ্ডিতে আটকে নেই।

নৈহাটিতে হামলা
তবে সব কিছু শান্তিপূর্ণভাবে চলেনি। নৈহাটিতে মিছিলের সময় দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মিছিলে হামলা করে তারা মাইকের তার ছিঁড়ে দেয়।

শেষ কথা
রবিবারের এই আন্দোলন ছিল বিচার চাওয়ার সংগ্রাম। মানুষ নিজেরাই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে। বিভিন্ন স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে, আরজি করের ঘটনার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ যেন দিনের পর দিন আরও তীব্র হয়ে উঠছে, যার শেষ হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বিচারের প্রতিফলনেই হবে

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
error: Content is protected !!