দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds

তবলা মহাভারতে ওস্তাদ জাকির হোসেন আর নেই।

তবলা মহাভারতে ওস্তাদ জাকির হোসেন আর নেই।

জাকির হোসেন, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যতম বরেণ্য তবলা বাদক। তার হাতে তবলা নিয়ে যেন মায়া জাগে। তার সুরের ছোঁয়ায় মুগ্ধ হয়েছে গোটা বিশ্ব।
“তবলার তালে নাচতো সুরের রথ সেই সুরকার জাকির হোসেন আর নেই।”জাকির হুসেনে ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ দেহত্যাগ করেন। জাকির হোসেন ১৯৫৯ সালের ৯ই মার্চ মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিশ্ব বিখ্যাত তবলা বাদক, সুরকার, পারকশনিস্ট, সংগীত প্রয়োজন এবং চলচ্চিত্র অভিনেতা ছিলেন। তিনি তবলা বাদক আল্লাহর রাখার জ্যেষ্ঠপুত্র ছিলেন এবং তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তবলা বাদকদের একজন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত, জ্যাজ ফিউশন এবং বিশ্ব সংগীত অসামান্য অবদান রেখেছেন। আমরা জাকির হোসেনের পরিবার এবং অসংখ্য অনুরাগীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। তার অকাল মৃত্যুর সঙ্গে জগতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।


জাকির হোসেনের জীবন শুরু হয় তবলার যাদু করেই জগতে। তার পিতা, বিখ্যাত তবলা বাদক ওস্তাদ আল্লাহ রাকহার কাছে থেকে ছোটবেলা থেকেই তিনি তবলার তালে তালে জীবন শিখতে শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম ও অক্লান্ত সাধনার মাধ্যমে তিনি তবলার জগতে এক অনন্য স্থান অর্জন করেন। তিনি তবলা বাঁধনে ছিল এক অনন্য মাত্র। তিনি তবলা কে একটি স্বতন্ত্র বাদ্যযন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার নতুনত্বপূর্ণ রীতি, জটিল তালবদ্ধতা এবং সুরের সঙ্গে খেলাধুলা তাকে অন্যসব তবলা বাদকদের থেকে আলাদা করেছে। জাকির হোসেন বিশ্বের বিখ্যাত সংগীত শিল্পীদের সাথে যৌথভাবে সংগীত পরিবেশন করেছেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের জগতে তিনি পন্ডিত রবিশঙ্কর, বিসমিল্লাহ খাঁ, কিশোরী আমন কারের মতো কিংবদন্তিদের সাথে যুগলবন্দী করেছেন। পাশ্চাত্য সংগীতের জগতে তিনি জন্ম ম্যাকলাফ্লিন, জিমি হেন্ড্রিক্স, ইয়ার হামেলটেনের মতো বিখ্যাত সংগীত শিল্পীদের সাথে সহযোগিতা করেছেন।

জাকির হোসেন শুধু ভারতীয় উপমহাদেশের নয় বিশ্বজুড়ে তার সংগীতের ছাপ রেখে গেছে। তিনি বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীদের সাথে যৌথভাবে সংগীত পরিবেশন করেছেন জ্যাজ, রক, ক্লাসিক্যাল ও বিশ্ব সংগীতের মিশ্রণে তার সৃষ্টি করা নতুন সুরের ধারা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। জাকির হোসেন শুধু একজন মহান শিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন অনুপ্রেরণার উৎস। তার অসাধারণ প্রতিভা, নতুনত্ব পূর্ণ রীতি এবং সংগীতের প্রতি অগাধ ভালোবাসা নতুন প্রজন্মের তবলা বাদকদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বিভিন্ন সংগীত বিদ্যালয় শিক্ষকতা করেছেন এবং তার ওয়ার্ক সবগুলোতে অংশগ্রহণ করে হাজার হাজার তরুণ তবলা বাদক তার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছে। তার সংগীতের প্রতি অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং ভালোবাসা তরুণ প্রজন্মের তবলা বাদক দের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে।

জাকির হোসেন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন প্রথম ভারতীয় শিল্পী হিসেবে একক রাতে ৩টি গ্র্যামি পুরস্কার জিতে।

জাকির হোসেনের অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেছেন। পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করে। এরমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল তার গ্ৰামি পুরস্কার। তিনি ২০১৪ সালে গ্লোবাল ড্রাম প্রজেক্ট অ্যালবামের জন্য গ্রামি পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ সহ বিভিন্ন জাতীয় সম্মান লাভ করেছেন। জাকির হোসেনের অসামান্য অবদান ভারতীয় সংস্কৃতির জন্য অমূল্য।

তিনি তবলার জগতে নতুন দিগন্তের দার উন্মোচন করেছেন এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত কে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছেন। তার সঙ্গে শুধু কানকেই নয়, মনকেও ছুয়েছে। আমরা তার সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়েছি, আনন্দিত হয়েছি এবং শান্তি পেয়েছি। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছেন এবং তার স্মৃতি চিরকাল আমাদের মনে বেঁচে থাকবে। তিনি শুধু একজন সংগীতশিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন অনুপ্রেরণা। তার সংগীতের মাধ্যমে তিনি মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছেন, তাদের জীবনে আনন্দ ও শান্তি এনেছেন। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি কিন্তু তার সৃষ্টিকরার সঙ্গী চিরকাল আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে।

Written by:

সেজুতি সরকার,
গণমাধ্যম, আশুতোষ কলেজ
প্রথম বর্ষ।


Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
আরও পড়ুন
error: Content is protected !!