ডেঙ্গু একটি ভাইরাল রোগ যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। শহরাঞ্চলে আগের ধারণা ছিল যে ডেঙ্গু শুধু শহরের নির্দিষ্ট স্থানে ঘটে, যেমন নির্মীয়মান ইমারতের জল জমে থাকার কারণে। তবে, গ্রামীণ এলাকায়ও উন্নয়নমূলক কাজ এবং পাকা বাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ সেখানে বেড়েছে। তাই শহর ও গ্রাম উভয় ক্ষেত্রেই ডেঙ্গুর প্রতি সতর্ক থাকা জরুরি।
পুরনো উপসর্গ
ডেঙ্গুর পুরনো উপসর্গগুলির মধ্যে ছিল:
- জ্বর: উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর
- মাথাব্যথা: তীব্র মাথাব্যথা
- সারা গায়ে অসহ্য যন্ত্রণা: শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রচণ্ড ব্যথা, যা ‘ব্রেক বোন ফিভার’ নামেও পরিচিত।
এখন ডেঙ্গুর আরও মারাত্মক রূপ দেখা যায়, যেমন:
- ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS): রক্তচাপ কমে যাওয়া
- ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার (DHF): রক্তপাতের প্রবণতা ও প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া
এই সমস্যাগুলি কিডনি, ফুসফুস, এবং ব্রেনের কার্যক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ডেঙ্গু স্ট্রেন
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্ট্রেন রয়েছে:
- ডেঙ্গু ১
- ডেঙ্গু ২
- ডেঙ্গু ৩
- ডেঙ্গু ৪
ডেঙ্গু ১, ২, ও ৩ স্ট্রেন বেশি ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত। এই স্ট্রেনগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম
বর্তমানে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলির মধ্যে নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে, যেমন:
- প্যাংক্রিয়াটাইটিস (প্যানক্রিয়াসের প্রদাহ)
- এনসেফালোপ্যাথি (মস্তিষ্কের প্রদাহ)
- মায়োকার্ডাইটিস (হৃদপেশীর প্রদাহ)
- হেপাটাইটিস (যকৃতের প্রদাহ)
- জন্ডিস (ত্বক ও চোখে হলুদ ভাব)
- লিভার ফেলিওর (যকৃতের কার্যক্ষমতা হ্রাস)
- অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি (কিডনির গুরুতর ক্ষতি)
ডেঙ্গু মোকাবিলার উপায়
ডেঙ্গু মোকাবিলায় রোগীকে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:
- পরীক্ষা: জ্বরের প্রথম দিনেই ডেঙ্গু এলাইজা মেথডে এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট এবং ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করাতে হবে।
- অ্যান্টিবায়োটিক এড়িয়ে চলুন: ডেঙ্গুতে অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষতিকর হতে পারে।
- পানির চাহিদা পূরণ: প্রচুর জল পান করুন।
- উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা: রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
সতর্কতার লক্ষণ
ডেঙ্গুর গুরুতর উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
- পেটে তীব্র ব্যথা
- একটানা বমি
- মাড়ি থেকে রক্তপাত
- বেশি ক্লান্তি
এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ যেমন পেটে ব্যথা, বমি, হলুদ প্রস্রাব, ইউরিনের মাত্রা হ্রাস, মাথা ঘোরানো, গায়ে র্যাশ ইত্যাদি দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা উচিত।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- জল জমে থাকা স্থান পরিষ্কার করুন: নির্মীয়মান বাড়ি, টব, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোলার মতো জায়গায় জল জমে না তা নিশ্চিত করুন।
- মশার বংশবিস্তার স্থান পরিস্কার রাখুন: রাস্তার জল জমা বা বাড়ির আশপাশে জল জমে থাকলে তা পরিষ্কার করুন।
এই সতর্কতা এবং প্রতিকার অনুসরণ করে ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব