০৭ নভেম্বর ২০২৪, নিজস্ব সংবাদদাতা, চুঁচুড়া: হেমন্তের দেবী জগদ্ধাত্রী, যাঁকে বলা হয় ‘হৈমন্তিকা,’ তাঁর অপরূপ রূপ নিয়ে চিরকালই মুগ্ধ থাকে ভক্তমণ্ডলী। পুরাণ অনুসারে দেবীর সৌন্দর্য অতুলনীয়। চন্দননগরে এই দেবীর পূজায় তাঁর সৌন্দর্যে যোগ হয় বিশেষ সাজের আভিজাত্য, যা দর্শকদের আরও বেশি আকর্ষণ করে। চন্দননগরের কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি গত পঞ্চাশ বছর ধরে দেবীর এই বিশেষ সজ্জাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পুরস্কার প্রদান করে আসছে।
জগদ্ধাত্রী প্রতিমাকে মূলত শোলার সামগ্রী দিয়ে সাজানো হয়। সেই সজ্জায় শিল্পের অসাধারণ ছোঁয়া থাকে, যা দেবীর সৌন্দর্যকে অনন্য করে তোলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শোলার সাজে থিমের প্রভাব দেখা যাচ্ছে, এবং পূজা উদ্যোক্তারা প্রতিবারই নতুন নতুন থিমের মাধ্যমে চোখ ধাঁধানো শিল্প তুলে ধরছেন।
জগদ্ধাত্রীকে সাধারণত যুদ্ধের পোশাকে সাজানো হয় না। দেবীর হাতে অস্ত্র থাকে, কিন্তু তা শুধুমাত্র তাঁর দৈবী শক্তির প্রতীক। চন্দননগরে জগদ্ধাত্রীকে রাজরানির মতো সজ্জিত করার রীতি চলে আসছে সেই আদিকাল থেকেই। শোলার তৈরি মুকুট থেকে শুরু করে দেবীর পুরো কাঠামো জুড়ে থাকে এই সাদা সজ্জা, যা কখনও কখনও দেবীর পুরো প্রতিমাকে মুড়িয়ে দেয়। শোলার সাজের সাথে থিম যোগ হওয়ার ফলে দেবীর পটভূমিতে কখনও রামায়ণের দৃশ্য বা শুভ প্রতীক স্থান পায়। এই বছরের উর্দিবাজারের পূজায় যেমন দেবী মহিষাসুরমর্দিনীর থিমে সেজেছেন।
শোলাশিল্পী আকাশ পাল বলেন, “চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী প্রতিমার শোলার সাজ খুবই বিশেষ। আমরা বহু প্রজন্ম ধরে এই কাজ করে আসছি, এবং এমন সজ্জার আকর্ষণ অন্য কোথাও দেখি না।” শিল্পীরা আরও জানান যে শোলা এক প্রকার জলাভূমিতে জন্মানো ঘাস, যা কেটে তার সাদা অংশ দিয়ে অলঙ্কার বানানো হয়। জগদ্ধাত্রী পূজায় শোলার মুকুট সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও দেবীকে সম্পূর্ণ শোলার সাজেই সজ্জিত করা হয়। শোলার এই সজ্জা হাতির দাঁতের কাজের মতো দেখতে লাগে, তাই একে ‘হার্বাল আইভরি’ নামেও ডাকা হয়।