কলকাতার এক পুজোয় প্রতিবাদের ছবি
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪: স্বর্গের দেবীকে পূজার অর্ঘ্য দেওয়া কি সম্ভব, যখন মর্ত্যের কন্যা যন্ত্রণা ভোগ করে? এই বছরের দুর্গোৎসব সেই প্রশ্নই সামনে এনেছে। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাটি সমাজকে এক বড় ধাক্কা দিয়েছে। যা এক নতুন ভাবনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। বাঙালির সেরা উৎসব এইবার শুধুমাত্র আনন্দের নয়, বরং নিজেদের নতুনভাবে বোঝার, আত্মসমালোচনার এক সুযোগ। এবারের দুর্গাপুজোয় দুটি নাম বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে—আরজি কর এবং অভয়া। পুজোর অনেক থিমে এই বার্তা প্রতিফলিত হবে। পুজো উদ্যোক্তারা বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা রেখেই উৎসবের আয়োজন করছেন। ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের মতে, মেয়ের ক্ষতকে বিচারই নিরাময় করতে পারে। অনেকেই বিশ্বাস করছেন, দেবীর পূজার মাধ্যমে মেয়েদের উপর হওয়া অন্যায় মিটবে।
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের বার্তা।
প্রতিবাদের রূপ তো নানাবিধ। দুর্গোৎসবের আয়োজনও সেই প্রতিবাদের এক মাধ্যম। বিভিন্ন রকমের পুজোতেও একটিই সুর—বিচার চাই। উৎসবের মাঝে সেই দাবি ভুলে যাচ্ছেন না কেউ। ফোরাম ফর দুর্গোৎসব তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে—”চালচিত্র থাকলে খালি, ভালো কি লাগবে বাঙালির?/বিচার জুড়োক মেয়ের ক্ষত/ পুজো ফিরুক আগের মতো।”

এই বার্তা উঠে এসেছে ভবানীপুর ৭৫ পল্লি, টালা বারোয়ারি, রামজয় শীল লেনের শতদলের পুজোতে। উপস্থাপনা আলাদা হলেও মূল বিষয়বস্তু একই। পুজোর মরশুমে এই পুজোগুলি ভিন্ন হলেও একই সুতোয় গাঁথা।

টালা বারোয়ারির এবারের পুজো পোস্টারে লেখা রয়েছে #Everyonewantsjustice। অর্থাৎ এই ক্লাবের পুজোতে উদ্যোক্তা এবং দর্শকদের একত্রিত করার প্রয়াসে বিচার দাবির বার্তা দেওয়া হয়েছে। ভবানীপুর ৭৫ পল্লির বার্তা—আস্থা রাখুন, ভরসা রাখুন/ দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই। অন্যদিকে, রামজয় শীল লেনের শতদল ক্লাবের মণ্ডপে আঁকা ছবিতে মেয়েদের নির্যাতনের কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হুগলির একটি পুজো তাদের পোস্টারে লিখেছে—“দুর্গা বড় অসহায়।” সেইসঙ্গে একটি কবিতার লাইন—”চাই না মোরা দিল্লি ঘটুক কিংবা কলকাতা/সভ্য সমাজ গর্জে উঠুক ভাঙতে নীরবতা।” এইভাবে তারা প্রমাণ করে দিচ্ছে, অনুদান ফিরিয়ে না দিয়েও প্রতিবাদের সুর বজায় রাখা যায়।