০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪: শিল্পের পথ কখনোই মসৃণ নয়, বিশেষত সেই শিল্পীর জন্য, যিনি জীবনের প্রতিকূলতা থেকে অনুপ্রেরণা পান। আনন্দ বা নিশ্চিন্ত জীবন নয়, বরং শিল্পীর আসল শক্তি লুকিয়ে থাকে তার সৃষ্টির যন্ত্রণায়। সমাজের প্রতিটি ঘটনা শিল্পীকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে, বদলে দেয় তার দৃষ্টিভঙ্গি। ঠিক তেমনই একটি ঘটনার সাক্ষী হয়ে এবার বাংলার শিল্পীরা অনুভব করছেন এক গভীর যন্ত্রণা, যা প্রভাব ফেলছে তাঁদের সৃষ্টিতে।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা যেন বদলে দিয়েছে মৃৎশিল্পীদের মন ও সৃষ্টির ধারা। দুর্গাপুজোর আগে যে মুহূর্তটি সাধারণত উল্লাসে ভরে ওঠে, তা এবার বিষণ্ণতায় ডুবে গেছে। দেবী দুর্গাকে মর্তে আহ্বানের আগে বাংলার মাটিতে একজন তরুণীর মর্মান্তিক মৃত্যু যেন সবার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আর এই শোকের ছায়া সরাসরি প্রভাব ফেলেছে বিখ্যাত মৃৎশিল্পী সনাতন দিন্দার কাজেও। তার হাতে গড়া এবারের দুর্গা প্রতিমা আর আগের মতো নয়, তার চেহারায় এবার দেখা দেবে বিষাদের ছাপ।
রবিবার কুমোরটুলিতে মৃৎশিল্পীদের এক প্রতিবাদ মিছিলও হয়েছিল। হাতে তুলি, রং ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাঁরা আর জি করের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই মিছিল থেকেই সনাতন দিন্দা জানান, কীভাবে এই বছর তাঁর দুর্গা প্রতিমার আদল বদলে গিয়েছে। তিনি বলেন, “এবারের দুর্গার মুখ বিষণ্ণ থাকবে। কারণ, সমাজের এই অবস্থা আমাকে সেভাবেই ভাবতে বাধ্য করছে।”
একটি পুরনো সাক্ষাৎকারে সনাতন দিন্দা বলেছিলেন, “আমার মেয়ে আমাকে বলেছিল, ‘বাবা, এবার অন্য কিছু করো।’ তখন আমি দুর্গার স্কেচ করছিলাম। তবে আর জি করের ঘটনার পরে মনে হচ্ছে, সেই স্কেচ বদলাতে হবে। কারণ দুর্গার মুখ আর আগের মতো হাস্যময় নয়, এবার তার মুখে বিষণ্ণতার ছাপ থাকবে।”
এবারের দুর্গা প্রতিমায় থাকবে এমন এক আভাস, যেখানে দেবী সরাসরি অস্ত্র ধারণ করবেন। সনাতন দিন্দা বলেন, “গত ২৪-২৫ বছর ধরে আমার দুর্গা কখনোই অস্ত্র হাতে রাখেনি। তবে এবার দশভুজার হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছি। কারণ, আজকের সমাজে এর প্রয়োজন রয়েছে।”
এই বছর, সনাতন দিন্দার হাতে গড়ে উঠবে এক অন্য ‘দুর্গা’, যাঁর চেহারায় দেখা দেবে বিষাদের ছায়া, কিন্তু যাঁর হাতে থাকবে সমাজকে বাঁচানোর শক্তি।