মোক্ষদা একাদশীর অর্থ
‘মোক্ষদা’ শব্দটি মানে প্রলোভন ধ্বংস করা। এই একাদশীকে তাই মোক্ষদা একাদশী বলা হয়। দ্বাপর যুগে এই দিনেই শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে গীতার জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। তাই এই দিনটি গীতা জয়ন্তী নামেও পালিত হয়, যা মানবতাকে ধর্মের পথে পরিচালিত করার শিক্ষা দেয়।
মোক্ষদা একাদশী ব্রত পূজা বিধি
এই একাদশীতে শ্রীকৃষ্ণ, মহর্ষি বেদব্যাস এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার পূজা করা হয়। পূজা বিধি নিম্নরূপঃ
- একাদশীর আগের দিন দশমীতে শুধুমাত্র একবার আহার গ্রহণ করুন এবং রাতে খাবার গ্রহণ করবেন না।
- একাদশীর সকালে স্নান সেরে ব্রত পালনের সংকল্প গ্রহণ করুন।
- শ্রীকৃষ্ণের পূজা করুন ধূপ, প্রদীপ, নৈবেদ্য (প্রসাদ) দিয়ে। রাতে জাগরণ করুন এবং ভক্তিমূলক গান পরিবেশন করুন।
- দ্বাদশীর দিন সকালে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করার পর দুঃস্থদের আহার করান ও দান করুন। তারপর ব্রত ভঙ্গ করে আহার গ্রহণ করুন।
মোক্ষদা একাদশী এবং গীতা জয়ন্তীর গুরুত্ব
এই ব্রতের ফলে কোনো ব্যক্তির পূর্বপুরুষ মোক্ষ প্রাপ্তি লাভ করে এবং তাদের কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়। এছাড়া এই ব্রত পালনের মাধ্যমে ব্যক্তির পাপ বিনষ্ট হয়।
বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতার জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। তাই মোক্ষদা একাদশীর দিন গীতা জয়ন্তী উদযাপন করা হয়। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এক মহৎ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ যা ঈশ্বরীয় আধ্যাত্মিকতার মর্ম ব্যাখ্যা করে। এটি শুধুমাত্র একটি বই নয় যা বাড়িতে লাল কাপড়ে মুড়ে রাখা হয়, বরং এর উপদেশ পড়া ও জীবনে গ্রহণ করা উচিত। গীতার শ্লোক পাঠ বা শ্রবণ জীবনে নতুন প্রেরণা জোগায়। তাই এই দিনে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, শ্রীকৃষ্ণ এবং মহর্ষি বেদব্যাসের পূজা করা হয়।
মোক্ষদা একাদশী ব্রত কাহিনী
একসময় বৈখানস নামে এক রাজা গোকুল নগরে রাজত্ব করতেন। এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন যে তার পিতা নরকে কষ্ট ভোগ করছেন এবং মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছেন। পিতার অবস্থা দেখে রাজা চিন্তিত হয়ে পড়েন। পরদিন তিনি ব্রাহ্মণদের ডেকে স্বপ্নের অর্থ জিজ্ঞাসা করেন। তারা বললেন, “হে রাজন! আপনি পার্বত নামে এক মুনির আশ্রমে যান এবং তার কাছ থেকে মুক্তির উপায় জানুন।”
রাজা সেখানে গিয়ে মুনিকে স্বপ্ন সম্পর্কে বলেন। মুনি তাকে জানালেন, “হে রাজন! আপনার পিতা তার পূর্বজন্মের কর্মের জন্য নরকে আছেন। আপনি মোক্ষদা একাদশীর ব্রত পালন করে এর ফল তার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলে তিনি মোক্ষ লাভ করবেন।”
মুনির পরামর্শ অনুযায়ী, রাজা মোক্ষদা একাদশীর ব্রত পালন করেন এবং ব্রাহ্মণদের খাদ্য, দান, বস্ত্র প্রদান করেন। এই ব্রতের প্রভাবে তার পিতা মোক্ষ লাভ করেন।