হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতিটি মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে (১৪তম দিন) মাসিক শিবরাত্রি উদযাপিত হয়। ‘মাসিক’ অর্থ মাসিক এবং ‘শিবরাত্রি’ অর্থ মহাদেবের রাত্রি। মাসিক শিবরাত্রি মাসে একবার পালিত হয়, আর মহাশিবরাত্রি বছরে একবার পালিত হয়। এই দিনটি ব্রহ্মচারী নারীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এই উপবাস তাদের কাঙ্ক্ষিত সঙ্গী লাভে সহায়তা করে। এই উপবাস শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে না, এটি ক্রোধ, ঈর্ষা, অহংকার এবং লোভের মতো অমঙ্গলের অনুভূতিকে দমন করতেও সহায়ক।
মাসিক শিবরাত্রির তাৎপর্য
মাসিক শিবরাত্রি মহাদেবকে নিবেদিত একটি শক্তিশালী ও শুভ উপবাস হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি পুরুষ ও মহিলারা তাদের জীবনে উন্নতি ও ভবিষ্যতের কল্যাণের জন্য পালন করেন। বিশ্বাস করা হয় যে যদি কেউ দিনরাত শিবের মন্ত্র “ওম নমঃ শিবায়” জপ করেন, তবে তিনি সমস্ত পার্থিব ইচ্ছা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। মাসিক শিবরাত্রির উপবাসের কিছু উপকারের মধ্যে দ্রুত সুস্থতা, সুস্থ স্বাস্থ্য এবং আউটবাউন্ড সুখ অন্তর্ভুক্ত। বলা হয় যে এই উপবাসের মাধ্যমে একজন জীবনের সমস্ত চাপ ও দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং মুক্তি ও মোক্ষ লাভ করতে পারেন।
মহাশিবরাত্রি: মানব দেহের একত্রীকরণের সম্ভাবনা
শিবরাত্রি হল চাঁদের মাসের ১৪তম রাত্রি। এটি সবচেয়ে অন্ধকার রাত হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ এটি নতুন চাঁদের (অমাবস্যা) আগে আসে। মহাশিবরাত্রি হল অন্তহীন সম্ভাবনা, আধ্যাত্মিক সাফল্য এবং বাহ্যিক বৃদ্ধি ও সুখের রাত্রি। বিশুদ্ধ হৃদয় ও আত্মা নিয়ে মহাদেবকে পূজা করলে আপনি জীবনের জন্য মোক্ষ ও করুণা লাভ করতে পারেন।
● মহাশিবরাত্রিতে মাথা মুণ্ডন
মানুষ মহাশিবরাত্রিতে তাদের মাথা মুণ্ডন করেন কারণ এটি নতুন চাঁদের দিনটির আগে আসে, যখন মানব দেহের মধ্যে একটি ঊর্ধ্বমুখী শক্তির প্রভাব থাকে। মহাশিবরাত্রির দিন মাথা মুণ্ডন করা আধ্যাত্মিক আলোকপ্রাপ্তি এবং মানসিক স্বচ্ছতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
● মহাশিবরাত্রির শক্তির প্রভাব
হিন্দু ক্যালেন্ডারে বারোটি শিবরাত্রি রয়েছে, যার মধ্যে মহাশিবরাত্রি সবচেয়ে আধ্যাত্মিক গুরুত্ব রাখে। এই দিনটি এমন একটি দিন যখন প্রকৃতি মানুষকে তার আধ্যাত্মিক স্বের দিকে ঠেলে দেয়। এই সারারাতের উত্সবের তাৎপর্য হল বিশ্বজগতের মধ্যে প্রাকৃতিক শক্তির উত্থানের অনুমতি দেওয়া।
● মহাশিবরাত্রি: আধ্যাত্মিকতার দিনের গুরুত্ব
মহাশিবরাত্রি আলোকপ্রাপ্তি এবং বৃদ্ধির পথে চলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যারা পরিবারে বাস করেন, তারা মহাশিবরাত্রি শিবের বিবাহবার্ষিকী হিসেবে পালন করেন। যারা পার্থিব আকাঙ্ক্ষা রাখেন, তারা এই দিনটিকে শিবের সমস্ত শত্রু পরাজিত করার দিন হিসেবে দেখেন।
শিবরাত্রির উপবাস
মাসিক শিবরাত্রি বা মহাশিবরাত্রি হোক, ভক্তরা একই উপবাস পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
- প্রথমে তারা তিলের বীজ দিয়ে স্নান করেন, যা শরীরের অপবিত্রতা দূর করতে সহায়তা করে
- তারপর তারা শিব মন্দিরে গিয়ে ভজন, কীর্তন, এবং প্রার্থনা করেন মহাদেবকে খুশি করার জন্য
- ভক্তরা শিবলিঙ্গে মধু, চন্দন, দই, গোলাপজল, এবং ফুল অর্পণ করেন
- বেল পাতা, পান পাতা, চাল, এবং ফলও শিবের পূজার জন্য নিবেদন করা হয়
- দীপ এবং ধূপ জ্বালানো হয় মহাদেবের আশীর্বাদ লাভের জন্য
- ভক্তরা তাদের কপালে পবিত্র ছাই (ভিভুতি বা ভস্ম) প্রয়োগ করেন
- দিন ও রাত জুড়ে ‘ওম নমঃ শিবায়’ মন্ত্র জপ করা হয়
- বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্ত্র আপনাকে আপনার পূর্বের পাপ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম।