দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds

আজকের উৎসব গোবর্ধন পূজা: প্রকৃতি ও মানবতার প্রতি শ্রদ্ধার উৎসব

আজকের উৎসব গোবর্ধন পূজা: প্রকৃতি ও মানবতার প্রতি শ্রদ্ধার উৎসব

গোবর্ধন পূজা হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। এই উৎসব প্রকৃতি এবং মানবজাতির সাথে সংযোগের প্রতীক। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের প্রথম দিনে গোবর্ধন পূজা বা অন্নকূট উদযাপিত হয়। গোটা ভারতে এই উৎসব পালন করা হলেও উত্তর ভারতে, বিশেষ করে মথুরা, বৃন্দাবন, নন্দগাঁও, গোকুল এবং বরসানার মতো ভ্রজভূমি এলাকায় এর গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুভূত হয়। এই অঞ্চলগুলোর সঙ্গে গোবর্ধন পূজার গভীর সংযোগ রয়েছে কারণ এই স্থানেই শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পূজার জন্য গোকুলবাসীদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন এবং দেবরাজ ইন্দ্রের অহংকার দূর করেছিলেন।

গোবর্ধন পূজার তারিখ ও ধর্মগ্রন্থের উল্লেখ

গোবর্ধন পূজা কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের প্রথম দিনে পালন করা হয় এবং এটি কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে উদযাপন করা হয়।

  1. শুক্লপক্ষের প্রথম দিনে গোবর্ধন পূজা পালন করা উচিত। তবে শাস্ত্র অনুযায়ী পূজার সময়কালে রাতে চন্দ্রোদয় না হওয়া বাঞ্ছনীয়।
  2. পূজার দিনে সূর্যাস্তের সময় যদি চন্দ্রোদয়ের সম্ভাবনা থাকে তবে গোবর্ধন পূজা আগের দিন সম্পন্ন করা উচিত।
  3. যদি সূর্যোদয়ের সময় প্রতিপদ তিথি বিদ্যমান থাকে এবং চন্দ্রোদয়ের সম্ভাবনা না থাকে, তবে পূজা একই দিনে পালন করা হয়। এর ব্যতিক্রম হলে পূজা আগের দিন সম্পন্ন করা উচিত।
  4. প্রতিপদ তিথি যদি সূর্যোদয়ের পর ৯ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকে, তবে পূজা সেইদিনই করা উচিত, যদিও সন্ধ্যায় পূর্ণ চন্দ্রোদয়ের অনুপস্থিতি থাকে।

গোবর্ধন পূজার নিয়ম ও প্রক্রিয়া

ভারতে গোবর্ধন পূজার এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই দিনে ভরুণ, ইন্দ্র এবং অগ্নি দেবতার পূজা করার রীতি রয়েছে। গোবর্ধন পর্বত, গোধন অর্থাৎ গরু এবং শ্রীকৃষ্ণ এই পূজায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উৎসব আমাদের শিক্ষা দেয় যে মানবজীবন প্রকৃতির মৌলিক উপাদান ও সম্পদের উপর নির্ভরশীল, এবং তাই আমাদের প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।

  1. গোবর্ধন পূজার দিন গোবর দিয়ে গোবর্ধনের প্রতিমূর্তি তৈরি করা হয় এবং ফুল দিয়ে সজ্জিত করা হয়। সাধারণত পূজা সকাল অথবা সন্ধ্যায় সম্পন্ন করা হয়। পূজার সময় জল, ফল, ধূপ এবং নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। এই দিনে গরু, ষাঁড় এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রাণীদেরও পূজা করা হয়।
  2. মাটিতে গোবর্ধনের প্রতিকৃতি তৈরি করে তাতে এক প্রদীপ রাখা হয়। পূজার সময় দুধ, দই, গঙ্গাজল, মধু এবং বাতাশা প্রদীপে রাখা হয়, তারপর প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
  3. পূজা শেষে গোবর্ধন জীর মূর্তিকে পরিক্রমা করার সময় জল ঢেলে এবং বার্লি বীজ বপন করে প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করা হয়।
  4. গোবর্ধন গিরিকে দেবরূপে পূজা করা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সন্তানের মঙ্গল এবং গরুর দুধ বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
  5. এই দিনে বিশ্বকর্মা দেবতাকেও পূজা করা হয়। এই উপলক্ষে কারখানা ও শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিরও পূজা করা হয়।

গোবর্ধন পূজার অনুষ্ঠান

গোবর্ধন পূজা প্রকৃতি এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রতি নিবেদন। এই দিন বিভিন্ন মন্দিরে ধর্মীয় আচার এবং ভোজনের আয়োজন করা হয়। পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

  1. গোবর্ধন পূজার দিনে গোবর্ধন পর্বত পরিক্রমার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মনে করা হয়, এই পরিক্রমা শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য অত্যন্ত শুভ।

গোবর্ধন পূজার পেছনের কিংবদন্তি

গোবর্ধন পূজার গুরুত্ব বিষ্ণু পুরাণে বর্ণিত হয়েছে। কথিত আছে, দেবরাজ ইন্দ্র তার শক্তি নিয়ে অহংকারে মগ্ন ছিলেন, তাই তার অহংকার দূর করতে শ্রীকৃষ্ণ সামনের দিকে এগিয়ে আসেন। একটি প্রাচীন কাহিনী অনুসারে, একবার গোকুলবাসীরা আনন্দের সঙ্গে গান গেয়ে, নানান রকম মিষ্টি তৈরি করছিলেন। এই দৃশ্য দেখে বালকৃষ্ণ মা যশোদার কাছে জানতে চাইলেন, এই প্রস্তুতি কেন। মা যশোদা উত্তর দিলেন যে তারা ইন্দ্রদেবের পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তখন কৃষ্ণ বললেন, গোকুলবাসীদের উচিত গোবর্ধন পর্বতের পূজা করা কারণ গরুর জন্য ঘাস এবং বৃক্ষ-লতা বৃষ্টির কারণ। গোকুলবাসী কৃষ্ণের কথায় সম্মত হয়ে গোবর্ধন পূজা শুরু করেন। এতে ইন্দ্র ক্রুদ্ধ হয়ে প্রতিশোধ নিতে গোকুলে প্রবল বর্ষণ শুরু করেন। কৃষ্ণ তার কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পর্বত উত্তোলন করে গোকুলবাসীদের রক্ষা করেন। অবশেষে, ইন্দ্র বুঝতে পারেন যে তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন এবং ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করেন।

গোবর্ধন পর্বতের পরিক্রমা ও অন্নকূট

গোবর্ধন পূজার দিন গোবর্ধন পর্বতের পরিক্রমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বত উত্তর প্রদেশের মথুরা জেলায় অবস্থিত, যেখানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত গোবর্ধন পর্বতের পরিক্রমা করতে আসেন।

গোবর্ধন পূজার দিন অন্নকূট উৎসবও পালন করা হয়। অন্নকূট শব্দের অর্থ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্যের মিশ্রণ, যা শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করা হয়। কিছু স্থানে বাজরার খিচুড়ি এবং পুরি প্রস্তুত করা হয়। এছাড়াও দুধের মিষ্টি এবং নানা রকমের খাবারও শ্রীকৃষ্ণের ভোগে নিবেদন করা হয়। পূজা শেষে ভক্তদের মধ্যে এই প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
আরও পড়ুন
error: Content is protected !!