দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds
আজকের উৎসবঃ কার্তিক পূর্ণিমা ব্রত, জেনে নিন এর কাহিনী, বিধি ও তাৎপর্য

আজকের উৎসবঃ কার্তিক পূর্ণিমা ব্রত, জেনে নিন এর কাহিনী, বিধি ও তাৎপর্য

ত্রিপুরাসুর সংহার এবং ধর্মীয় তাৎপর্য

কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমাকে কার্তিক পূর্ণিমা বলা হয়। এই দিনে, মহাদেব ত্রিপুরাসুর নামক অসুরকে বধ করেন, তাই একে ত্রিপুরি পূর্ণিমা নামেও ডাকা হয়। যদি এই দিনে কৃত্তিকা নক্ষত্র থাকে, তবে এটি মহাকর্তিকী নামে পরিচিত হয়। আবার যদি এই দিনে ভরণী নক্ষত্র থাকে, তবে তা শুভ ফল প্রদান করে। এবং রোহিণী নক্ষত্র থাকলে কার্তিক পূর্ণিমার গুরুত্ব দশগুণ বেড়ে যায়।

ধারণা করা হয় যে, কার্তিক পূর্ণিমার প্রাক্কালে ভগবান বিষ্ণু মৎস্য অবতার গ্রহণ করেছিলেন। এই দিনে গঙ্গা স্নানের পর প্রদীপ দান এবং বিভিন্ন দানের মাধ্যমে দশটি যজ্ঞের ফল লাভ করা যায়। কার্তিক পূর্ণিমাকে দেবতারা (ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, অঙ্গিরা এবং আদিত্য) অত্যন্ত শুভ উৎসব হিসেবে অভিহিত করেছেন।

আজকের উৎসবঃ কার্তিক পূর্ণিমা ব্রত, জেনে নিন এর কাহিনী, বিধি ও তাৎপর্য

কার্তিক পূর্ণিমার ব্রত বিধি

কার্তিক পূর্ণিমায় গঙ্গা স্নান, প্রদীপ দান, হোম, যজ্ঞ এবং দেবতার পূজা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই দিনের বিভিন্ন রীতি এবং ব্রত পালন পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো:

  • ভোরে ঘুম থেকে উঠে ব্রতের সংকল্প নিন: পবিত্র নদী, সরোবর বা পুকুরে স্নান করুন।
  • পূর্ণিমা রাতে ছয়টি সৃষ্টির দেবতাদের পূজা করুন: শিব, সন্ততি, প্রীতি, অনসূয়া এবং ক্ষমা পূজা করুন।
  • রাতের ব্রত পালন ও দান: কার্তিক পূর্ণিমা রাতে ব্রত রেখে বলিদান করলে শিব পদ লাভ হয়।
  • বিভিন্ন দান: গরু, হাতি, ঘোড়া, রথ বা ঘি দান করলে সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়। ভেড়া দান করলে যোগজনিত প্রতিকূলতা দূর হয়।
  • প্রতি পূর্ণিমা উপবাস ও জাগরণ: কার্তিক পূর্ণিমা থেকে প্রতি পূর্ণিমায় উপবাস ও জাগরণ করলে সকল ইচ্ছা পূর্ণ হয়।
  • হবন ও দান-দক্ষিণা: এই দিনে পূজার সমাপ্তি হোম এবং গরিব-অসহায়দের আহার দানের মাধ্যমে করা উচিত।
  • যমুনা স্নান ও প্রদীপ দান: যমুনা স্নান করে রাধা-কৃষ্ণের পূজা এবং প্রদীপ দান করেই ব্রত শেষ করা হয়।

কার্তিক পূর্ণিমার গুরুত্ব

কার্তিক মাসের পূর্ণিমা বছরের সবচেয়ে পবিত্র পূর্ণিমাগুলির একটি। এই দিনে দান ও সেবা মহৎ ফল প্রদান করে। কার্তিক পূর্ণিমায় চাঁদ কৃত্তিকা নক্ষত্রে এবং সূর্য বিশাখা নক্ষত্রে থাকলে পদ্মক যোগ সৃষ্টি হয় যা খুবই বিরল। আবার চাঁদ ও বৃহস্পতি যদি কৃত্তিকা নক্ষত্রে থাকে, তবে এই পূর্ণিমাকে মহাপূর্ণিমা বলা হয়। সন্ধ্যায় ত্রিপুরা উৎসব পালন এবং প্রদীপ দান করলে পূর্বজন্মের কষ্ট ও দুঃখ মোচন হয়।

কার্তিক পূর্ণিমার কাহিনী

প্রাচীন কালে, ত্রিপুরা নামক এক অসুর ছিল। সে প্রায় এক লক্ষ বছর ধরে প্রয়াগে কঠোর তপস্যা করেছিল। তার ভয়ানক তপস্যা দেখে জীবজগৎ ও দেবতারা ভীত হয়ে পড়েছিল। দেবতারা তার তপস্যা ভঙ্গ করতে অপ্সরাদের পাঠায়, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা তাকে বর দিতে আসেন এবং ইচ্ছা জিজ্ঞাসা করেন।

ত্রিপুরাসুর ব্রহ্মাকে বলল, “আমাকে যেন কোনো দেবতা বা মানুষ মেরে ফেলতে না পারে।” ব্রহ্মা এই বর প্রদান করেন। এরপর ত্রিপুরাসুর নির্ভয়ে অত্যাচার শুরু করে এবং কৈলাস বিজয় করতে চলে যায়। সেখানে তার সাথে মহাদেবের যুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত শিব, ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর সাহায্যে মহাদেব ত্রিপুরাসুরকে বধ করেন।

এভাবেই ত্রিপুরাসুরের বধ এবং ধর্মীয় তাৎপর্যের মাধ্যমে কার্তিক পূর্ণিমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র উৎসব হিসাবে পালিত হয়।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
error: Content is protected !!