বাংলার ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা, সর্বত্রই নিজ দক্ষতায় নিজের জায়গা করে নিয়েছেন অপরাজিতা আঢ্য। মাত্র আঠারো বছর বয়সে টলিউডে পা রাখা এই অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবন আর পেশাদার জীবনের সংগ্রামের কাহিনি অনেকটাই সিনেমার গল্পের মতো। কেরিয়ারের একেবারে শুরুতেই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অপরাজিতা। ১৮ বছর বয়সেই ১৪ বছরের বড় টেকনিশিয়ান অতনু হাজরাকে বিয়ে করেন তিনি। এই সিদ্ধান্তই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

বিয়ের পর ইন্ডাস্ট্রির ‘অফ’ হওয়া
সম্প্রতি এক পডকাস্টে (স্ট্রেট আপ উইথ শ্রী) জীবনের সেই কঠিন সময়ের কথা শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী। অপরাজিতা জানালেন, “বিয়ের পর ইন্ডাস্ট্রি আমায় একেবারে ব্রাত্য করে দেয়। আমি যে সিরিয়ালগুলোতে কাজ করছিলাম, সেখান থেকে আমাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। কারণ আমি একজন টেকনিশিয়ানকে বিয়ে করেছিলাম। পুরোপুরি বাড়িতে বসে যেতে হয়েছিল।”
তখন তিনি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। হাওড়ার বাপের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় স্বামীর সংসারে আসার পর ডিস্ট্যান্সে পড়াশোনা করছিলেন। বাড়িতে বন্দি জীবন কাটাচ্ছিলেন। অপরাজিতা জানান, “আমি তখন খুব রোগা ছিলাম। তবে টানা দেড় বছর বসে থাকার কারণে খুব মোটা হয়ে যাই। বিবাহিত হওয়া আর বাড়তে থাকা ওজনের কারণে ইন্ডাস্ট্রির চোখে নায়িকার চরিত্রের জন্য আমি আর যোগ্য ছিলাম না।”
নিঃসন্তান দাম্পত্য, তবুও সুখী জীবন
অপরাজিতা আরও বলেন, “আমার হাতে কাজ ছিল না, তবে আমার কোনো দুঃখও ছিল না। আমার বর আর শ্বশুর-শাশুড়ি কাজে বেরিয়ে তালা দিয়ে যেতেন। আমি বাড়িতে পুতুল বানাতাম, হাতের কাজ করতাম, খেতাম আর ঘুমোতাম। জীবনটা একেবারে সাদামাটা ছিল।”
অতনুর সঙ্গে এক মাসের আলাপেই বিয়ে করেছিলেন তিনি। যদিও তাঁদের মধ্যে বয়সের ফারাক ১৪ বছর, তবে ভালোবাসার বন্ধনে এই ব্যবধান কখনোই বড় হয়ে দাঁড়ায়নি। এমনকী নিঃসন্তান হওয়ার যন্ত্রণাও তাঁদের দাম্পত্য সুখে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি।
ফের কাজে ফেরা
অপরাজিতা জানান, তাঁর স্বামী ও শাশুড়ি মায়ের অনুপ্রেরণাতেই তিনি আবার কাজের জগতে ফিরে আসেন। কঠিন সময়ে অতনু সবসময় পাশে থেকেছেন। দেখতে দেখতে তাঁদের বৈবাহিক জীবনের ২৭ বছর পার হয়ে গেছে। ভালোবাসা, সহযোগিতা আর সম্মানের মধ্য দিয়ে এই দীর্ঘ পথ তাঁরা একসঙ্গে পাড়ি দিয়েছেন।
আজকের অপরাজিতা
বর্তমানে অপরাজিতা আঢ্য বাংলার বিনোদন জগতের অন্যতম মুখ। ছোটপর্দা হোক বা বড়পর্দা, তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা দর্শকদের মন জয় করেছে। তবে আজকের অপরাজিতার পিছনে লুকিয়ে আছে এক সংগ্রামী জীবনের কাহিনি, যা অনুপ্রেরণা দেয় অনেককেই।