২০২৪ সালের ২২ ও ২৩ নভেম্বর কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন গোলপার্কে অনুষ্ঠিত হয় অটিজম কনভেনশন ২০২৪, যা ভারতের সর্ববৃহৎ প্যারেন্টস মিট হিসেবে ইতিহাস তৈরি করেছে। ৭০০-র বেশি অংশগ্রহণকারী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই কনভেনশনে যোগ দেন। কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা যেমন কোচবিহার থেকে বাঁকুড়া ছাড়াও উত্তরাখণ্ড, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, কোয়েম্বাটুর, নাসিক, ইন্দোর, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, আসাম, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার এবং প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও নেপাল থেকেও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

এই দুই দিনের অনুষ্ঠানে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। সেশনে আর্থিক পরিকল্পনা, আবাসন বিকল্প, আইনগত সুরক্ষা, এবং নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার কৌশলগুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি পিতামাতার মানসিক স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, যৌনতা, এবং পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা নিয়ে গভীর আলোচনা ও বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া, ব্যক্তিগত পরামর্শ এবং হাতে-কলমে কর্মশালা ছিল এই কনভেনশনের বিশেষ আকর্ষণ, যা সম্পূর্ণরূপে বুকড ছিল। কনভেনশনটি অভিভাবকদের এই বার্তা দেয় যে অটিজম কোনো রোগ নয় বরং একটি আজীবন চলমান অবস্থা। দ্রুত “ম্যাজিকাল কিউর” এর পেছনে সময় এবং অর্থ নষ্ট না করে, অভিভাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।


একসাথে কাজ করার উদাহরণ
এই কনভেনশনের নেতৃত্ব দেন পাঁচজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর অভিভাবক: সুমিত্রা পাল বক্সী (বৈদুর্য্যের মা), ডঃ অমৃতা পান্ডা (দিশার মা), নীলাঞ্জনা রামবথু (বেঙ্কটেশের মা), চৈতালি গামী (শ্রেয়ার মা), এবং ডঃ রুদ্রজিৎ সিনহা (অধিরাজের বাবা)। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরাও উপস্থিত ছিলেন, যেমন: ডঃ পঙ্কজ মারু, অধ্যাপক শেখর শেশাদ্রি (নিমহান্স), আইনজীবী ইউকে শুক্লা, ডঃ জয় আর রাম, এবং ক্রিকবাজের ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ জয় ভট্টাচার্য।

অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ডঃ জশোধরা চৌধুরী, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ; নীনা ওয়াঘ (গুরুগ্রাম); তুলিকা দাস (পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন); শম্পা সেনগুপ্ত (শ্রুতি ডিসেবিলিটি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা); এবং লীনা বার্ধন (নোবেল মিশন) প্রমুখ।

একাত্মতার অনুভূতি
কনভেনশনের অন্যতম বিশেষত্ব ছিল অভিভাবকদের সক্রিয় ভূমিকা। পুরো খাবার পরিবেশন, ইয়ারবুক ডিজাইন, প্রচার, প্রিন্টিং, স্টল, এবং ভেন্যু সাজানো – সবই অভিভাবকরা নিজেরাই করেছেন।

কনভেনশনে দুটি অনন্য উদ্যোগের সূচনা হয়:
- অটিজম আউটডোরস কার্ড – পরিবারের সদস্যদের সামাজিক মেলামেশায় উৎসাহিত করার জন্য এই কার্ডটি বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, সেলুন, এবং রিসর্টে ছাড় প্রদান করে।
- অটিজম ফ্যামিলি কার্ড – অ্যাপোলো ক্লিনিকের এই কার্ডটি অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের এবং তাদের পরিবারের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ ছাড় প্রদান করে।
এছাড়া, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের তৈরি হস্তশিল্পের স্টলগুলি ছিল এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ।


সামাজিক উদ্যোগ
এই বছর কনভেনশনে তিনটি বিশেষ ক্যাম্পেইন চালানো হয়:
- প্রফেশনাল ডিরেক্টরি – অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষজ্ঞদের তালিকা।
- অটিজম আউটডোরস – পরিবারের সদস্যদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ।
- ফাদার্স ফর অটিজম – বাবা-মায়েদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কমিউনিটি গঠনে ভূমিকা নিতে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা।

আশার বার্তা
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সকল অভিভাবক এবং অতিথিরা একটি আশাব্যঞ্জক পরিবেশ অনুভব করেন। অনুষ্ঠানের অসামান্য ব্যবস্থাপনা এবং উষ্ণ পরিবেশের প্রশংসা করেন অতিথি ও বক্তারা।

অটিজম কনভেনশন ২০২৪ এক নতুন উদাহরণ তৈরি করেছে, যেখানে প্রত্যেকে একসাথে কাজ করার শক্তিতে বিশ্বাস করে। এটি দেখিয়েছে যে “একটি শিশুকে বড় করতে একটি গোটা গ্রাম লাগে।”