আজ থেকে ১৬ বছর আগে, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর, মুম্বাইতে ঘটে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। এই সমন্বিত হামলাগুলো চালানো হয়েছিল তাজ হোটেল, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট হোটেল, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, লিওপোল্ড ক্যাফে, মুম্বাই চাবাদ হাউস (নারিম্যান হাউস), কামা হাসপাতাল এবং মেট্রো সিনেমায়। হামলাগুলো চালায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার ১০ জন সন্ত্রাসী, যারা সমুদ্রপথে মুম্বাই প্রবেশ করেছিল। মাত্র একজন সন্ত্রাসী, আজমল কাসাব, জীবিত ধরা পড়ে। পরে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ২০১২ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন কমপক্ষে ১৬৬ জন মানুষ, যার মধ্যে ২০ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং ২৬ জন বিদেশি নাগরিক। আহত হন আরও ৩০০ জনেরও বেশি। আজ, সারা দেশের মানুষ এবং নেতারা সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, যারা এই বর্বর হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন।
২৬/১১-এর সাহসী নায়কেরা
তুকারাম ওম্বলে
মুম্বাই পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক তুকারাম ওম্বলে ছিলেন ২৬/১১ হামলার অন্যতম সাহসী নায়ক। তিনি নিরস্ত্র অবস্থায় সন্ত্রাসী আজমল কাসাবকে আটকানোর জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। গিরগাঁও চৌপাট্টিতে কাসাবকে পাকড়াও করার সময় তিনি তার রাইফেল ধরে রেখেছিলেন। এই সময় কাসাব গুলি চালায়, যা ওম্বলের মৃত্যু ঘটায়। তবে তার এই সাহসিকতায় কাসাবকে জীবিত ধরা সম্ভব হয়, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণণ
মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণণ ছিলেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (NSG)-এর কমান্ডো দলের নেতা। তিনি তাজ হোটেলে আটকে থাকা সন্ত্রাসীদের দমন করতে গিয়ে বীরত্বের সাথে প্রাণ হারান। তার সাহসিকতার জন্য ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি তাকে মরণোত্তর অশোক চক্র সম্মান প্রদান করা হয়।
হেমন্ত কারকারে
এন্টি-টেররিস্ট স্কোয়াড (ATS)-এর প্রধান হেমন্ত কারকারে ছিলেন এক সাহসী আইপিএস অফিসার। কামা হাসপাতালের কাছে এক অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি শহীদ হন। তার সাথে আরও দুই সাহসী কর্মকর্তা অশোক কামটে এবং বিজয় সালাস্কারও প্রাণ হারান।
মল্লিকা জাগাদ
তাজ প্যালেস হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট ম্যানেজার মল্লিকা জাগাদ নিজের উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে হোটেলের অতিথিদের রক্ষা করেছিলেন। তিনি আলো নিভিয়ে, দরজা বন্ধ করে অতিথিদের শান্ত থাকতে বলেন এবং আতঙ্কের মধ্যেও তাদের আশ্বস্ত করেন। তার নেতৃত্বে অনেক মানুষ প্রাণে বাঁচেন।
করমবীর সিং কাং
তাজ হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার করমবীর সিং কাং নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের হারান এই হামলায়। তবে ব্যক্তিগত শোক সত্ত্বেও তিনি হোটেলের অতিথি ও কর্মীদের বাঁচাতে দিনরাত কাজ করেন।
থমাস ভার্ঘিজ
তাজ হোটেলের ওসাবি রেস্তোরাঁর প্রবীণ ওয়েটার থমাস ভার্ঘিজ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিথিদের নিরাপদে পাঠান। সবার শেষ ব্যক্তি হিসেবে তিনি রেস্তোরাঁ ত্যাগ করেন। দুর্ভাগ্যবশত সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
শ্রদ্ধাঞ্জলি
২৬/১১ মুম্বাই হামলার এই বীর নায়করা আমাদের দেখিয়েছেন কীভাবে সংকটময় পরিস্থিতিতে বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের পরিচয় দিতে হয়। তাদের প্রতি আজ আমাদের গভীর শ্রদ্ধা, এবং আমরা যেন তাদের আত্মত্যাগের থেকে শক্তি ও অনুপ্রেরণা নিতে পারি।