১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪: সারা রাত চলেছে প্রতিবাদ-আন্দোলনের ঢেউ। পরের দিন ভোরে, ক্লান্তির লেশমাত্র না রেখে নতুন উদ্যমে আন্দোলন শুরু হলো।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলন মঞ্চে প্রজেক্টর ও পর্দার আয়োজন ছিল। এক তরুণী চিকিৎসক-ছাত্রীর প্রতীকী ছবিতে মালা দিয়ে বেদীটি সাজানো হয়েছিল, এবং মোমবাতি প্রজ্বলিত করে শ্রদ্ধা নিবেদন চলছিল। আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের মাঝে একটা ‘বিশ্বাস’-এর ছাপ স্পষ্ট ছিল। তবে, সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তাদের মনোবলে চিড় ধরালো, যা তারা এক মাস ধরে লালন করছিল।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজ শুরু করতে হবে। অন্যথায় রাজ্য সরকার পদক্ষেপ নিলে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। প্রধান বিচারপতির এই আদেশ শুনে আন্দোলনকারীদের হতাশার ছাপ ফুটে ওঠে। কিন্তু, এই নির্দেশের আগে, প্রধান বিচারপতি ওয়াই এস চন্দ্রচূড় রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলকে তরুণী চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের চালান দেখতে চাইলে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের মধ্যে গভীর মনোযোগ দেখা যায়। কপিল যখন জানান, চালান তাঁর কাছে নেই, তখন কয়েকজন আন্দোলনকারীর মুখ শক্ত হয়ে যায়। এর আগে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রসঙ্গ উঠতেই মঞ্চে হাততালি পড়ে। আবাসিক চিকিৎসকদের চোখ-মুখ তখনও আশাবাদী ছিল।
তবে, যখন আদালত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার নির্দেশ দেয়, তখন অধিকাংশ আন্দোলনকারীই হতাশ হয়ে বলেন, ‘‘আমরা চরম হতাশ।’’ আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বক্তব্য, রাজ্যের পাশাপাশি সারা দেশ সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু, তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, তা পরিষ্কার হয়নি। এতদিনেও ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। কয়েকজন বলেন, ‘‘রাজ্যের আইনজীবী বলেছেন ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা সঠিক নয়। সিনিয়র চিকিৎসকরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং আমরাও টেলিমেডিসিন ও স্বাস্থ্য শিবির পরিচালনা করছি। কিন্তু এই জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদ কী পরিণতি পাবে, তা এখনও অজানা।’’
সুপ্রিম কোর্টের শুনানি শেষ হওয়ার পরই আন্দোলন মঞ্চ থেকে আবাসিক চিকিৎসকরা আর জি করের চারপাশে ছড়িয়ে জটলা করতে শুরু করেন। এদিকে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন এবং সেখান থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এ ঘটনার পর আন্দোলনকারীদের হতাশা আরও বাড়ে। মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সব দাবি না মানার ইঙ্গিত দেওয়ার পর আবাসিক চিকিৎসকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আর জি করের জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষে অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘‘এটা কোনো আলু-পটলের ব্যবসা নয়। যা ঘটেছে, তার প্রতিবাদে আমরা ন্যায্য কিছু দাবি জানিয়েছি। যদি রাজ্য সরকার এটুকু মেনে নিতে না পারে, তাহলে সাধারণ মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।’’
আবাসিক চিকিৎসকরা জানান, প্রথম থেকেই তাঁরা আন্দোলনে রাজনীতির ছায়া পড়তে দেননি। তারা চিকিৎসক-পড়ুয়া হিসেবে সাধারণ কিছু দাবি করেছেন মাত্র। সরকারের পক্ষ থেকে সেগুলি মানতে অসুবিধা কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। অনিকেত মাহাতো ও কিঞ্জল নন্দ বলেন, ‘‘আমরা কখনো মুখ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইনি। কিন্তু আমাদের আশা ছিল, রাজ্য প্রশাসন আমাদের ন্যায্য দাবিগুলির প্রতি সহানুভূতিশীল হবে।’’ পরে, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর সদস্যরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, ‘ন্যায় চাই’-এর স্লোগান দিয়েই কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।